
প্রকাশিত: Sat, May 11, 2024 1:50 PM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 12:18 PM
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়
রফি হক : রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় খুব ছোটবেলায়। আমার আম্মা আমাদের আমাদের স্কুলে যাবারও আগে একটি কবিতা পড়াতেন সুর করে করে আমি ও আমার ছোটোবোন আম্মার সঙ্গে গলা মেলাতাম আমাদের ছোটো নদী চলে আঁকে বাঁকে/বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে/পার হয়ে যায় গরু/পার হয় গাড়ি/দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি। আমরা পিঠাপিঠি ভাই-বোন এই কবিতাটি পড়তে খুব মজা পেতাম। কারণ বৈশাখ মাসে আঁকা বাঁকা গড়াই নদী পার হয়ে যখন ঘোড়াঘাট হয়ে নানাবাড়ি যেতাম তখন এমন দৃশ্যই দেখতাম। তাই কবিতাটি আমাদের প্রিয় ছিল। খুব আপন মনে হতো কবিতাটিকে। আর মনে হতো, রবীন্দ্রনাথ বোধহয় আমাদের কথা ভেবেই লিখেছেন এই কবিতাটি। কিন্তু আমাদের দুই ভাই-বোনকে তো উনি চেনেন না, তাহলে? আম্মা বলতেন, বিশ্বকবি সব জানেন। আমার নানাবাড়ির পাশের গ্রামটি শিলাইদহ। সেই শৈশবে আম্মার মুখেই শুনেছিলাম রবি ঠাকুরের বাড়ি শিলাইদহে। এ কারণে আম্মার ভেতর একটা চাঁপা ভালোলাগা ছিল, তাঁর পাশের গাঁয়ে বিশ্বকবির বাড়ি। কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ নওগাঁ,পতিসর মিলে রবীন্দনাথের জমিদারী ছিল। কিছুদিন আগে অন্নদাশঙ্কর রায়ের স্মৃতিকথায় পড়লাম ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথের বাবা মহির্ষির মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথের জমিদারি ভাগাভাগি হয়ে যায়। শিলাইদহ পড়ে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগে, আর পতিসর রবীন্দ্রনাথের ভাগে। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র সুরেন্দ্রনাথ শিলাইদহের মালিক হন। কিন্তু দেনার দায়ে তাঁর অংশ বিক্রি হয়ে যায়। শিলাইদহ কিনে নেন ভাগ্যকুলের রায়রা এবং ভাগ্যকুলের রায়রা হন শিলাইদহের মালিক। এই তথ্য আমার জানা ছিল না মহির্ষির মৃত্যুর পরে মানে ১৯০৫ এর পরে রবীন্দ্রনাথ এদিকে আর আসতেন না তেমন। সেখানে পতিসরের জমিদারী দেখাশুনা করতেন রবীন্দ্রনাথের শ্যালক নগেন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ পতিসরে আসতেন কম। শিলাইদহেও আসতেন না। আসলেও বোটে থাকতেন। অন্নদাশংকর রায়চৌধুরী বলছেন শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের জমিদারির অফিস তিনি পরিদর্শন করেছিলেন যখন তিনি কুষ্টিয়ার মহকুমা হাকিম ছিলেন। সেখানে তিনি রবীন্দ্রনাথের স্বহস্তে লেখা দুখানি পত্র পান। তাতে তিনি তাঁর জমিদারির অফিসের আমলাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথের জন্য তিনশো বিঘা চরের জমি খরিদ করতে। আমেরিকা থেকে কৃষিবিদ্যা শিক্ষার পর তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথ সেখানে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ পরিচালনা করবেন। কবির সে পরিকল্পনা সফল হয়নি। রথীন্দ্রনাথ যখন দেশে ফেরেন তাঁর কিছুদিন পরেই রবীন্দ্রনাথ নোবেল প্রাইজ পান। তাঁর পুত্রকে কাছাকাছি রাখেন।
রথীন্দ্রনাথকে বিশ্বভারতীর সেক্রেটারি করে দেন। পতিসরে কবিগুরু তাঁর প্রজাদের জন্য একটি তহবিল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কল্যাণবৃত্তি তহবিল। প্রজারা খাজনার টাকায় এক আনা চাঁদা দিত, জমিদার তার সঙ্গে তাঁদের এক আনা জুড়ে দিতেন। এমনই করে যে টাকা উঠত তা দিয়ে জমিদারির তিনটি বিভাগে তিনটি ডাক্তারখানা ও তিনটি স্কুল পরিচালিত হত। এরকম ব্যবস্থা সেসময় আর কোনো জমিদারিতে ছিল না। এটা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের নিজের কীর্তি। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অন্নদাশঙ্কর রায়চৌধুরীর দেখা হয় কবিগুরুর সপ্ততিপূর্তির জন্মদিনে। শান্তি নিকেতনে। সেদিন গুরুদেব তাঁর নিজস্ব পোশাক ছেড়ে ধুতি পরেছিলেন। উদ্দীপ্ত কণ্ঠে ভাষ্ণ দিয়েছিলেন। একটি কবিতা পড়েছিলেন। কবিত একটি পঙক্তি মনে আছে : চিরনূতনেরে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ। আজ পঁচিশে বৈশাখ। রবীন্দ্রজয়ন্তী। রাত্রি হল ভোর/আজি মোর/জন্মের স্মরণপূর্ণ বাণী/প্রভাতের রৌদ্রে-লেখা লিপিখানি/হাতে করে আনি/ দ্বারে আসি দিল ডাক/পঁচিশে বৈশাখ/মোর চিত্তমাঝে/চির-নূতনেরে দিল ডাক/পঁচিশে বৈশাখ। কবির জন্মদিনে আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি। লেখক: চিত্রশিল্পী
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
